আলাপ আর ঋত্বিকার এখন রোজ কথা হয়। সপ্তাহ খানেক হয়েছে ওদের কথা বলার শুরুর বয়স। এমনি চলতি পথে হঠাৎ ঋত্বিকা বলল যে সে একবার দেখা করতে চায় আলাপের সাথে। তাকে না কি কী একটা দেওয়ার আছে ঋত্বিকার। আলাপ মনের আকাশে খুশির ঘুড়ি উড়িয়ে দেয়।
একদিন সন্ধ্যেয় অফিস শেষে এক কফি শপে দেখা করে তারা। একথা-সেকথায় নানা কথার ট্রেন চলতে থাকে অবিরাম। আর আলাপ মুগ্ধ চোখে দেখতে থাকে তার ঋত্বিকাকে। এই সাতটা দিনেই ঋত্বিকাকে যেন খুব আপন করে নিয়েছে সে – সেই আগের মতো। আজ খুব ইচ্ছে করছে ঋত্বিকার আঙুল্গুলোর অগ্রভাগের সাথে নিজের আঙুল ছোঁয়াতে। ধীরে ধীরে নিজের হাতটা এগোতে থাকে আলাপ। ঋত্বিকার হাতের খুব কাছাকাছি আসতেই ঋত্বিকা বলে ওঠে,”তোমাকে একটা জিনিস দেব বলছিলাম।“এই বলে সে তার ব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে। কার্ডটা দিয়ে আলাপকে সে বলে,”আমার বিয়ে, আগামী মাসে। তুমি আসবে কিন্তু।“ ঘটনার আকস্মিকতায় আলাপ কী বলবে ভেবে পায় না। তাই সে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,”আর কিছু বলার আছে তোমার?”
না, আমার কিছু বলার নেই। এটা দেওয়ার ছিল শুধু।
আমারও আর কিছু বলার নেই। উঠি তাহলে?
আসবে কি না বললে না?
দেখি।
ঠিক আছে। চলো।
এমনটা কেন করলো ঋত্বিকা? এটা কি তার অভিমান? না কি সত্যিই বন্ধু ভেবে দিল কার্ডটা? সেটা জানতে ফিরে যাওয়া যাক দু’দিন আগের এক বিকেলে। চায়ের কাপের ধোঁয়ার সাথে বৃষ্টির শব্দ মিশিয়ে প্রশ্ন করেছিল নিজেকে,”কী হচ্ছে এটা?”
কেন? যা হচ্ছে তোমার সম্মতিতেই তো হচ্ছে। (মন উত্তর দিল তাকে)
রোজ কথা বলা; কেন হচ্ছে এসব? কী চায় আলাপ এতদিন পর?
হয়ত তোমাকেই; আবার।
কিন্তু কেন? ও তো নিজের ইচ্ছেতেই আমাকে ছেড়ে চলে গেছিল।
হ্যাঁ। কিন্তু আজ তোমার অভাব বোধ করছে। পূরণ করতে চাইছে সেটা।
এখন?
তুমি কি চাও? চাও কি ওকে? বিশ্বাস করতে পারো?
জানি না।
সম্পর্কটা তুমি চাও কি?
তাও জানি না।
এমন সময় কাপের চা শেষ হয়ে গেল। কাজে ফিরতে হবে আবার।
দু’দিন ধরে ভেবে সে ঠিক করল আলাপকে হারানোর পর যে মানুষটা তাকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছে, তাকে সে ঠকাতে পারবে না। অয়নকে ঠকালে সে কোনদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না – কোনদিন না। আর সে জানে – খুব ভালো করে জানে, আজ আলাপ তার সাথে থাকলেও দু’দিন পর আবার ঠিক তাকে একা ফেলে চলে যাবে। সুতরাং, আজ আলাপের স্মৃতি সে মনের কোণে সরিয়ে রাখতে চায় যাতে ধুলো পড়ে যায়।