পর্ব- ২
বাইরে বৃষ্টি এল ঝমঝমিয়ে। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগতে শুরু করল বিনয়বাবুর। বৃষ্টির শব্দে যেন হারিয়ে গেলেন অতীতে।
“শোনো না, বৃষ্টি হচ্ছে। দেখবে?”
“হ্যাঁ? বৃষ্টি দেখব? দাঁড়াও আসছি।”
(বারান্দায় দাঁড়িয়ে দু’জন)
“তোমার বুঝি বৃষ্টি খুব ভালো লাগে?”
“হ্যাঁ। বৃষ্টি ভালোবাসি আমি। বৃষ্টি দেখলে কেন জানি আমার সব দুঃখ চলে যায়।”
“কী দুঃখ তোমার? আমায় বলবে?”
(অবাক হয়ে)”সত্যি শুনবে তুমি?”
“সত্যি শুনব।”
“তোমার দুঃখ বেড়ে যাবে না?”
“না অভয়া। তোমার মন থেকে দুঃখের বোঝা না নামাতে পারাটাই আমার দুঃখ।”
“কেন? এই অচেনা অজানা মেয়েটার কষ্টে তোমার কী এসে যায়?”
“জানি না। তবে এই অপরিচিতার অপরিচিত কষ্ট আমায় কষ্ট দেয়।”
বাকি কথাগুলো যেন চোখে হয়ে গেল। বুঝে নিল অভয়া – যা বোঝার।
অভয়ার শিরায় শিরায় শিহরণ ছড়িয়ে পড়ল। তারা ছড়িয়ে যেতে যেতে বলল,”আমরা উন্মাদ! আমাদের সামলে নিতে পারবে না!” বিনয়বাবু বললেন,”তোমার কি শীত করছে?” অভয়া হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল খুব আস্তে। ফিসফিসিয়ে বললেন বিনয়বাবু,”কাছে এসো অভয়া।”অভয়াকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে রাখল সে।
কিছুক্ষণ পর বিনয়বাবুর খেয়াল হল যে অভয়া ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। বিনয়বাবু তার মাথায় আলতো করে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন,”কাঁদছ কেন তুমি?”
“আমি কখনো ভাবিনি কেউ আমার এমন করে খেয়াল রাখবে, আমার কথা শুনবে, আমাকে নিয়ে ভাববে।”
(একটু হেসে)”তবে বৃষ্টি দেখ। বৃষ্টি দেখলে আর কান্না পাবে না।”
“একটা কথা দেবে আমায়?”
“চেষ্টা করব। বলো।”
“আমার পাশে এভাবে থাকবে তো সারাজীবন?”
“এ কথা আমি দেব না তোমায়। এই ভাবনাটা সময়ের উপরেই ছেড়ে দিই না চলো?”
বলে বিনয়বাবু অভয়া দেবীর মুখটা আলতো করে তোলেন। অশ্রু মুছে দেন দু’হাত দিয়ে। গাল দু’টো দু’হাতে ধরে অল্প উঁচু করে অভয়ার ঠোঁটের কোমলতার স্বাদ নিলেন তিনি। প্রগাঢ় সে চুম্বন। ভালবাসার উষ্ণ আঁচে কেঁপে কেঁপে ওঠে অভয়া। সেই প্রথম মিলনের দিনটা কোনদিনও ভুলবেন না বিনয়বাবু।
কিন্তু মা হওয়া হল না অভয়া দেবীর। বিয়ের তিন বছরের মাথায় এই অপারগতার কথা যখন নিশ্চিতভাবে জানতে পারলেন তারা, তখন থেকেই অভয়া কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেল। সেই থেকে তেমনই চলতে লাগল। তাই নিজের ছেলেমেয়ের বয়সি কাউকে দেখলে খুব মায়া হয় বিনয়বাবুর।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বিনয়বাবু খেয়াল করলেন কখন যেন ছেলেটা আবার আজ স্ট্রিট লাইটের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। ছেলেটা বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল। কিন্তু মেয়েটা এল না। ছেলেটা আকাশের মত বিষণ্ণ মনে ফিরে গেল। ছেলেটা চলে যেতেই কী যেন একটা অপ্রাপ্তিতে বিনয়বাবুকেও পেয়ে বসে। অপ্রাপ্তি কি সংক্রমিত হয়? কী জানি!