শেষ পর্ব
সারাদিন সময় যেন কিছুতেই কাটতে চায় না বিনয়বাবুর। আজ আর ছেলেমেয়ে দু’টো আসবে না। তিনি সময় কাটানোর উপায় খুঁজতে লাগলেন। হরিকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল বই পড়ার কথা। কথাটা মনে ধরল বিনয়বাবুর। ঠিক করলেন আজই যাবেন বই কিনতে। আর ঠিক করলেন এরপর থেকে রোজ বিকেলে হাঁটতেও যাবেন তিনি।
বই পড়ে আর ছেলেমেয়ে দু’টোকে দোতলার জানলা দিয়ে দেখেই দিন পার করতে লাগলেন তিনি। কিন্তু একদিন তার খুব ইচ্ছে হল ওদের কাছ থেকে দেখতে। তাই ওরা আসার একটু আগে গলির মাথায় গিয়ে দাঁড়ালেন বিনয়বাবু। আর মেয়েটা আসতেই ওর সাথে সাথে কিন্তু রাস্তার অপর পাশ থেকে হেঁটে যেতে লাগলেন খুব সাবধানে। তারপর দাঁড়িয়ে থেকে দেখতে লাগলেন ওদের। নাহ! এভাবে তাকিয়ে থাকাটা ভালো দেখায় না। তাই আবার রাস্তা পার হয়ে কিছুটা উল্টো দিকে হেঁটে আবার ওদের দিকে ফিরে আসতে লাগলেন তিনি। ওদের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় শুনলেন মেয়েটা বলছে,”বাড়িতে বোধহয় সন্দেহ করছে। জানি না কিছু বুঝে গেছে কি না। জিজ্ঞেস করছিল বাড়ি ফিরতে দেরি হচ্ছে কেন।”
“এভাবে বোলো না প্লিজ। সামলাও বাড়িতে। তোমার সাথে দেখা না করে থাকব কী করে!?”
“জানি না কী করব।”
বিনয়বাবু ওদের খুব কাছেই একটা চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে ওদের দেখতে লাগলেন-সাথে চলল চায়ের কাপে চুমুক। মেয়েটার চলে যাবার সময় হয়ে গেছে। সে যেতে গেলেই ছেলেটা তার হাতটা একবার ধরল। মেয়েটা আবার একটুক্ষণ দাঁড়াল। তারপর চলে গেল। বিনয়বাবু একটু হাসলেন। তারপর রোজকার বিকেলের হাঁটা সেরে ঘরে ফিরলেন।
বইগুলো বিনয়বাবুকে যেন নতুন প্রাণ দিয়েছে। তিনি আর আগের মতো একাকীত্ব অনুভব করেন না। কাছেই এক লাইব্রেরির খোঁজ পেয়েছেন তিনি। লাইব্রেরি আর কিশোরবেলার প্রেম; এই নিয়ে ভালোই আছেন তিনি। তিনি হরিকে একটা টেপ রেকর্ডার কিনে দিয়েছেন। অবসর পেলে তাতে গান শোনে হরি।
এমনি এক সাধারণ বিকেলে বিনয়বাবু অপেক্ষা করছিলেন সেই কিশোর-কিশোরীর জন্যে। ছেলেটা এসে যথাসময়ে স্ট্রিট লাইটের নিচে দাঁড়াল। একটু পর মেয়েটাও এলো। কিন্তু কে যেন মেয়েটার পিছু নিয়েছিল। আর মেয়েটা ছেলেটার কাছে আসতেই সেও কাছে এসে খুব রাগী ভঙ্গিতে ছেলেটার সাথে কথা বলতে লাগল। বিনয়বাবু বুঝলেন কিছু একটা ঝামেলা হয়েছে। হয়ত আগন্তুক মেয়েটার বাড়ির লোক। এরপর তিনি দেখলেন আগন্তুক মেয়েটাকে সপাটে একটা চড় মেরে মেয়েটার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন। ছেলেটা অসহায় মুখ করে দাঁড়িয়ে রইল। এমন সময় নিচের চায়ের দোকান থেকে অঞ্জন দত্তের গান ভেসে এল; রঞ্জনা আমি আর আসব না। ছেলেটা চলে গেল। আর তাদের কিশোরবেলার প্রেমের সাক্ষী হয়ে রইল বিনয়বাবু আর এই স্ট্রিট লাইট।